বন্ধু নির্বাচন
বন্ধু নির্বাচন
-মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম
মানুষ সামাজিক জীব। সে একাকি বাস করতে পারে না। আসলে মানুষের স্বভাব-প্রকৃতিই এমন যে, কোন মানুষ একাকী থাকতে চাইনা। আদম (আ) জান্নাতের অফুরন্ত সুখ-শান্তির মধ্যেও একাকীত্বের কারণে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। তার এই নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্য তার জীবন সঙ্গিনী হিসেবে হাওয়া (আ) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল। সুতরাং দেখা গেল যে, কোন সঙ্গী-সাথী বা বন্ধু ছাড়া মানব জীবন অচল। বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতাঃ পার্থিব জীবনে কোন মানুষই বন্ধুর সাহচর্য বা প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। মহানবী (সা) বলেছেন- মানুষ তার বন্ধুর ধর্ম (স্বভাব-চরিত্র) দ্বারা প্রভাবিত, সুতরাং সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে তা যেন যাচাই করে নেয়। অর্থাৎ এক বন্ধুর প্রভাব অন্য বন্ধুর ওপর পড়ে। সুতরাং স্বভাব চরিত্র দেখে বন্ধুত্ব করতে হবে। অনুকূল পারিপার্শ্বিকতা ও সৎ বন্ধর সাহচর্যে মানুষ মর্যাদার উচ্চাসন অর্জন করতে পারে। পক্ষান্তরে প্রতিকূল পারিপার্শ্বিকতা এবং অসৎ বন্ধু সংস্পর্শে সে মহাধ্বংসের অতল গহ্বরে তলিয়ে যেতে পারে। কার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে এবং কার সঙ্গে চলতে হবে, এ ব্যপারে পথ নির্দেশ করে মহান আল্লাহ বলেন- হে মুমিনগণ আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও। ( সূরা তাওবাঃ১১৯) সৎ লোকের সাথে চললে সৎ হওয়া যায়। অসৎ লোকের সাথে চললে অসৎ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কথায় বলে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- অসৎ সঙ্গীর চেয়ে একাকিত্ব ভাল। আর একাকিত্বের চেয়ে সৎ সঙ্গী ভালো। সৎ বন্ধুর গুনাবলীঃ মহাত্মা ইমাম গাজ্জালী (র) বলেছেন, যার সাথে বন্ধুত্ব করবে তার মধ্যে পাঁচটি গুন থাকা চাই। বুদ্ধিমত্তা, সৎস্বভাব, পাপাচারী না হওয়া, বিদআতী না হওয়া, দুনিয়াসক্ত না হওয়া। ১. বুদ্ধিমত্তাঃ নির্বোধ লোকের বন্ধুত্বে কোন কল্যাণ নেই। প্রবাদ আছে নির্বোধ বন্ধুর চেয়ে বুদ্ধিমান শত্রু ভালো। ২. সৎ স্বভাবঃ যার স্বভাব চরিত্র ভালো নয়, তার সাথে বন্ধুত্বে কোন মঙ্গল নেই। বন্ধুর স্বভাব-চরিত্র অন্য বন্ধুর ওপর খুবই প্রভাব বিস্তার করে। তাই সৎ স্বভাব দেখে বন্ধু নির্বাচন করা দরকার। ৩. পাপাচারী না হওয়াঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ পাককে ভয় করে না, তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ হওয়া যায় না। তার কথায় বিশ্বাস করা যায়না। তাই বন্ধু নির্বাচনে পাপাচারী না হওয়া উচিত। ৪. বিদআতী না হওয়াঃ বিদআত মানে কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী খারাপ কাজ। যে ব্যক্তি কোরআন-সুন্নাহর পরিপন্থী কাজে লিপ্ত তাকে ত্যাগ করা কর্তব্য। কারণ তার ঐ বিদআত অন্য বন্ধুর মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। ৫. দুনিয়াসক্ত না হওয়াঃ যে ব্যক্তি পরকালে ওপর ইহকালের অগ্রাধিকার দেয়, সে প্রবৃত্তির বশবর্তি হয়ে পাপকর্মে লিপ্ত থাকে, তার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনে কল্যাণ হতে পারে না। বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক করে হযরত জাফর সাদিক (র) বলেছেন- পাঁচ ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করবে না ১. মিথ্যাবাদীঃ কারণ তার কাছে প্রবঞ্চনা আর প্রতারণাই পাওয়া যাবে। ২. নির্বোধঃ তার থেকে কোন উপকার আশা করা যায় না, বরং অপকারই পাবে। ৩. ভীরুঃ সে তোমাকে বিপদের সময় শত্রুর হাতে সমর্পন করবে। ৪. পাপাচারীঃ সে তোমাকে এক লোকমার বিনিময়ে বিক্রি করে ফেলবে। ৫. কৃপণঃ সে একান্ত প্রয়োজনের সময় তোমাকে ত্যাগ করবে। কে প্রকৃত বন্ধু তা চেনা খুবই কঠিন। অনেক সময় পরম শত্রুও বন্ধুবেশে এসে ভীষন সর্বনাশ করে। ইবলিশ শয়তানও আদম (আ) ও হাওয়া (আ)- এর কাছে বন্ধুবেশে এসেছিল এবং তাদের ভীষণ ক্ষতি করেছিল। আমরা বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হব, সৎ বন্ধু নির্বাচন করে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তির পথ সুগম করব।
- ইসলামে শিশুর অধিকার
- ভূরুঙ্গামারীতে ১মাসের ব্যবধানে করোনায় আক্রান্ত হলেন আরো ২৭ জন