মাটির ফুলের ব্রাউন চিনি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে
চিনি দৈনন্দিন জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি খদ্যদ্রব্য প্রতিদিন আপনি চিনি খাচ্ছেন অথচ আপনি জানেন কি চিনিকে হোয়াইট পয়জনও বলা হয়?ঝকঝকে সাদা চিনি নয়, লালচে ব্রাউন চিনি যা সরাসরি আখের রস থেকে উৎপাদিত হয়।এই ব্রাউন চিনি গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলুন।যা একদম কৃষকের হাতে তৈরী আখের লালচে ব্রাউন অর্গানিক চিনি।এই স্বাস্থ্যকর ব্রাউন চিনি নিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে মাটির ফুল নামক একটি প্রতিষ্ঠান। যার স্বত্বাধিকারী আক্তার রোকসানা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে অর্গানিক লাল চিনি নিয়ে অনলাইন ভিত্তিক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।ময়মনসিংহ অঞ্চলের তৃনমুল প্রান্তিক চিনি চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ তারপর প্যাকেটজাত করে বাজারে এনেছেন। যা ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে রোকসানা বলেন জনসাধারণকে চিনির বিষক্রিয়া থেকে বাঁচাতে ও আমাদের দেশের তৃনমুল প্রান্তিক অর্গানিক চিনি চাষিদের আখের স্বাস্থ্যসম্মত চিনিকে মানুষের দোর-গোড়ায় পৌছে দিয়ে নিজেকে আত্মনির্ভরশীল নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই আমার লক্ষ্য।
উল্লেখ্য বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরা চিনির ব্যাপারে সতর্ক করে যাচ্ছেন নিয়মিতভাবে। বিশেষজ্ঞদের মত হলো, ধীরে ধীরে খাবারে চিনির ব্যবহার কমাতে হবে। কিন্তু খাবারের স্বাদ আনতে চিনি অপরিহার্য। তাই বাদ দেয়া সহজ নয়।
স্বাস্থ্যবিধি মানলে, চিনি ছাড়া অন্য খাদ্য উপাদান থেকে চিনি গ্রহণ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ফলমূল, শস্য, বাদাম এবং শাকসবজি থেকে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় চিনি পাওয়া যায়। এর বাইরে দানাদার চিনির প্রয়োজন খুব একটা হয় না। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যে শর্করা জাতীয় খাবার থাকে, তাতে যে পরিমাণ চিনি থাকে, তা আমাদের দেহে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। পরে দেহে তা শক্তি উৎপাদন করে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চিনি গ্রহণ করলে দেহের জন্য তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
যদি খেতেই হয়, সেক্ষেত্রে ঝকঝকে, ঝরঝরে মিহি দানার চিনির বদলে বাদামী চিনি গ্রহণ করা ভাল। এটিই স্বাস্থ্যকর।
বাজার থেকে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত চিনি না কিনে অর্গানিক ব্রাউন চিনি কেনার অভ্যাস সহজেই গড়ে তোলা যায়। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে ঝকঝকে সাদা চিনি। ঝরঝরে মিহি দানার এই চিনি আকর্ষণীয় প্যাকেটে বাজারজাত করার কারণে ক্রেতাদের বেশি টানে। অন্যদিকে দেশে তৈরি আখের চিনি স্বাস্থ্যকর হলেও এটি দেখতে লালচে, এর আর্দ্রতা বেশি। অনেক সময় ক্রেতারা এই চিনি কিনতে আগ্রহ দেখান না। তুলনামূলকভাবে অর্গানিক ব্রাউন চিনি নিরাপদ এবং শিশু খাদ্য হিসেবে অত্যান্ত স্বাস্থকর।
শিল্প-কারখানা রিফাইনিং (পরিশোধিত) পদ্ধতিতে চিনি তৈরির সময় ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, এনজাইম এবং অন্যান্য উপকারি পুষ্টি উপাদান দূর হয়ে যায়। এই চিনি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিদেশ থেকে আমদানীকৃত চিনি তৈরিতে সবসময় আখ ব্যবহার করা হয় না। আখের বিকল্প উপাদান দিয়েও চিনি তৈরি হয়। এই চিনিতে মিষ্টতা আনতে বাড়তি রাসায়নিক মিশ্রিত করা হয়। আর পরিশোধন প্রক্রিয়ায় চিনিতে যুক্ত হয় আরও ক্ষতিকর নানা উপাদান। পরিষ্কার বা সাদা করার জন্য ব্যবহার করা হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান সালফার, হাড়ের গুঁড়ো।
বাংলাদেশ খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরীক্ষায় দেখা গেছে, আমদানিকৃত পরিশোধিত এবং দেশে উৎপাদিত পরিশোধিত চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
আখ থেকে উৎপাদিত দেশি অর্গানিক ব্রাউন চিনিতে ক্যালসিয়ামের মাত্রা ১৬০ দশমিক ৩২, যা পরিশোধিত চিনিতে ১ দশমিক ৫৬ থেকে ২ দশমিক ৬৫ ভাগ। পটাশিয়াম দেশি চিনিতে ১৪২ দশমিক ৯ ভাগ, পরিশোধিত চিনিতে শূন্য দশমিক ৩২ থেকে শূন্য দশমিক ৩৫ ভাগ। ফসফরাস দেশি চিনিতে ২ দশমিক ৫ থেকে ১০ দশমিক ৭৯ ভাগ আর পরিশোধিত চিনিতে ২ দশমিক ৩৫ ভাগ। আয়রন দেশি চিনিতে শূন্য দশমিক ৪২ থেকে ৬ ভাগ আর পরিশোধিত চিনিতে শূন্য দশমিক ৪৭ ভাগ। ম্যাগনেশিয়াম দেশি চিনিতে শূন্য দশমিক ১৫ থেকে ৩ দশমিক ৮৬ ভাগ আর পরিশোধিত চিনিতে শূন্য দশমিক ৬৬ থেকে ১ দশমিক ২১ ভাগ। সোডিয়াম দেশি চিনিতে শূন্য দশমিক ৬ ভাগ, আর পরিশোধিত চিনিতে শূন্য দশমিক ২ ভাগ।
এসব কারণে বিশেষজ্ঞরা এখন দেশে উৎপাদিত বাদামী/লালচে চিনি খাবার পরামর্শ দিচ্ছেন।আর যদি সেটা কৃষকের নিজ হাতে তৈরী অর্গানিক চিনি হয় তাহলে তো আরো ভাল।মাটির ফুল সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারজাত করা শুরু করেছে ইতিমধ্যেই । অনলাইন ভিত্তিক ক্রেতারা পুরনো দিনের মতো আবার লালচে ব্রাউন চিনির অভ্যাস গড়ে তুলছেন। এটি কম ক্ষতিকর। তবে শেষে একটি কথার পুনরাবৃত্তি না করলেই নয়। পরিশোধিত সাদা চিনির চেয়ে লালচে ব্রাউন চিনির ক্ষতি কম।।
- ভূরুঙ্গামারীতে হাট বাজারে দেখা মিলছে প্রচুর দেশি প্রজাতির মাছ
- প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার কোনো নির্দেশনা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়